অভাবের কারণে ভালোবাসা যখন ব্যর্থতার দোরগোড়ায় তখন কিছু করার থাকে কি ?
ভালোবাসা খোলা জানালা দিয়ে পালিয়ে যায় ৷ ভালোবাসা শব্দটি মহাসাগরের ন্যয় গভীর ৷
নানা প্রকার কবি ও সাহিত্যিক নানান রকম ভাবে ভালোবাসার সংঙা নিরূপণ করেছেন ৷ এই বিষয়ে সবার ভিন্ন ভিন্ন মত আছে কিন্তু মূল ভাবনা একই ৷ আর এই ভালোবাসার প্রকার ভেদও অনেক ৷ আমরা এই বিষয়ে বলতে পারি,যেকোন জীবে প্রেম করাই এক প্রকার ভালোবাসা ৷
তবে মানুষ ব্যতিক্রমী প্রাণী ৷ জাত-পাত,ধর্ম ভেদ,ধনী গরীব,উঁচু নিচু কোনও প্রকার বন্ধন ব্যতিত যখন একটি প্রাণী,অন্য একটি প্রাণীকে নিঃস্বার্থ ভাবে মনে প্রাণে প্রতিটি ক্ষণে তার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে তাকেই আমরা প্রকৃত ভালোবাসা বলে থাকি ৷কিংবা যাকে তুমি ভালোবাস তার ব্যথায় নিজে ব্যথিত হওয়া ৷
প্রতিটি মানুষের জীবনে কোনও না কোন একবার প্রেম আসে,সেটা অজান্তেই হোক কিংবা জানাতে
হোক ৷ তাই বলে সে কখনোই ভালোবাসার গণ্ডী জাল থেকে বঞ্চিত থাকতে পারে না ৷ মূলকথা ভালোবাসা ব্যতীত জীবন হতে পারে না ৷ সে আলাদা আলাদা দৃষ্টিকোণ হতে পারে, তবে সময়ের সাথে সাথে মানুষের জীবনে ভালোবাসাকেও হেনস্থা হতে হয়েছে ৷ কেননা বর্তমান সময়ে,সেই ভালোবাসা আর নেই,যেটা ভালোবাসায় একান্ত কাম্য ৷ ভালোবাসার মধ্যেও স্বার্থের বীজ বপন হয়ে যাওয়া,সেটা এর শুরুতেই মূলত বেশি দেখা যায়, আমি প্রথমেই উল্লেখ করেছিলাম নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসা ৷ কিন্তু আজকের দিনে সে কথা আর নেই ৷ আজকাল তো যদি-“তুমি আমাকে ভালোবাসো তবেই আমি তোমাকে ভালোবাসবো” যেমন কোন কিছু চুক্তিপত্রে লেখা থাকে নিয়ম ও শর্তাবলী প্রযোজ্য,ঠিক তেমনি সকালে ভালবাসার শুরু আর বিকালে ভালোবাসা শেষ ৷ জীবনে প্রতিটি সম্পর্কের মধ্যেই আজ ভালোবাসা দ্ব্যর্থহীন ! এর কোন মূল্য নেই ৷
পাঠকের উদ্দেশ্যে বলছি–
সে আপনি যে কোনো সম্পর্কেই ধরে নিতে পারেন, যদি কোন মাতা পিতা তার সন্তানকে সারা জীবন নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসেন,তবে সেই সন্তান যদি বৃদ্ধকালে তার মাতা পিতার সেবা যত্ন না করে কিংবা ভালো না বাসে,সে ক্ষেত্রে পিতা-পুত্র কিংবা মা ও ছেলের ভালোবাসার মধ্যে কতটা স্বার্থ থাকে সেটা পাঠকের উপর ছেড়ে দিলাম ৷ আর হ্যাঁ ! শুধু মা’ই পারে নিজের সন্তানকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে, একথা চিরন্তন সত্য ৷
এবারে আসি প্রেমিক প্রেমিকার ভালোবাসার দিকে ৷ তবে এদের ব্যাপারে যতটাই বিস্তারিত বলা যায় ততটাই কম ৷ কেননা এদের ক্ষেত্রেই টার্মস এন্ড কন্ডিশনটা বেশি থাকে ৷ এদের একে অপরকে অনেক পরীক্ষাও দিতে হয়, চাওয়া-পাওয়াও সম্পূর্ণ করতে হয় ৷ তথাপি বিশ্বাস করতে পারে না,কেননা কোন ভরসা নেই,”যদি সে আমাকে ধোঁকা দেয়” ৷ তাই আমি বলি প্রেম-ভালোবাসায়–যদি, কিন্তু, কোনদিনও হওয়া উচিত নয় ৷ আমার মতে প্রেমিক-প্রেমিকার ভালবাসার ক্ষেত্রে এরকমটা হওয়া উচিৎ যে- “আমি তোমাকে ভালবেসে যাব ৷ তার বিনিময়ে আমি তোমার কাছ থেকে আশা করি না যে,” তুমিও আমাকে ভালোবাসবে” অথবা “তুমিও ভালবাসতে বাধ্যকর নও ৷ কেননা ভালোবাসা কখনোই জোর করে আদায় করা যায় না ৷ সেটা ব্যক্তির অন্তরের অন্তস্থল থেকে উঠে আসা অনুভূতি, তাকে অনুভব করতে হয় ৷ ভালোবাসা না দেখা দিতে পারে, না ছোঁয়া যেতে পারে ৷ একজন প্রেমিক যখন তার প্রেমিকাকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে কিংবা প্রেমিকা তার প্রেমিককে মনেপ্রাণে ভালোবাসে, তাই বলে- এই নয় যে, ভালবাসার পরীক্ষাস্বরূপ একে অপরকে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে ৷”আমি তোমাকে ভালোবাসি” তাই বলে তুমি আমাকে জোরপূর্বক বিয়ে করতে পারো না ৷ কেননা ভালবাসার সঙ্গে বিয়ের কোন সম্পর্ক নেই ৷ তবে দুই প্রেমিক-প্রেমিকা যদি স্বেচ্ছায় ভালবাসার পূর্ণতা স্বরূপ,একে অপরকে বিয়ে করে,সেক্ষেত্রে কারো কোন প্রকার আপত্তি না থাকাই ভালো ৷
স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসা :
একজন স্বামী একজন স্ত্রী নিঃস্বার্থ ভাবে একে অপরকে ভালবাসতে পারে ৷ তবে এ বিষয়ে অনেক কিন্তু আছে ৷ অনেক ক্ষেত্রেই সমাজে দেখা যায়, কিংবা বলা যেতে পারে বেশিরভাগ সময়ই এই দুটি সম্পর্কের মাঝখানে টক-ঝাল-মিষ্টি লেগে থাকে ৷ আবার অনেক সময় অভাব অনটনের সংসারে ভালোবাসা শব্দটির চরম দুর্দশা হতে দেখা যায় ৷ আর তখনই ভালোবাসা শব্দটির প্রকৃত অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় ৷ অভাবের কারণে ভালোবাসা যখন ব্যর্থতার দোরগোড়ায় তখন কিছু করার থাকে না ৷ ভালোবাসা খোলা জানালা দিয়ে পালিয়ে যায় ৷ ভালোবাসা শব্দটি মহাসাগরের ন্যয় গভীর ৷ এ বিষয়ে অন্য পর্বে আরও কথা হবে ৷ ভালো লাগলে শেয়ার অবশ্যই কাম্য ৷
লেখক: মহেফিল